লালসবুজ২৪.কম
ট্রাম্প শুল্কে বোয়িং কেনার হিড়িক

লালসবুজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০২:২১ পিএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে যে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো বিপাকে পড়ার কথা বলা হচ্ছিল তার অন্যতম বোয়িং। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি একদিকে চীনের বাজার হারাচ্ছে, অন্যদিকে ইউরোপীয় পণ্যে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানিও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।

কিন্তু সম্প্রতি ট্রাম্পের কিছু বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরের পর দেখা যাচ্ছে, বোয়িংয়ের অর্ডার বাড়ছে, লাভের পাল্লা ভারী হচ্ছে। এমনকি নানা দুর্ঘটনায় সমালোচিত বোয়িং লোকসানও কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে।

লোকসান কাটিয়ে উঠছে : বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কম্পানির বিমান সরবরাহ বাড়ায় লোকসানের অঙ্ক ছোট হয়ে এসেছে। বোয়িং জানায়, ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে লোকসান দাঁড়িয়েছে ৬৯৭ মিলিয়ন ডলার, যেখানে এক বছর আগের এই সময়ে লোকসান ছিল ১.৪ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় প্রান্তিকে কম্পানির রাজস্ব ৩৪.৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২২.৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালের পর এ বছরের প্রথম ভাগে সবচেয়ে বেশি বিমান সরবরাহ করেছে বোয়িং, যা কম্পানির ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টি স্পষ্ট করেছে।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেলি ওর্টবার্গ বলেন, ‘দ্বিতীয় প্রান্তিকে কম্পানির অগ্রগতিতে আমি সন্তুষ্ট। পরিবর্তন হতে সময় লাগে। কিন্তু আমরা আমাদের ব্যবসায় ভিন্নতা দেখতে শুরু করেছি।’ দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর বোয়িংয়ের শেয়ারের দাম বেড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে সুবিধা পাচ্ছে বোয়িং, সে কারণে লোকসান কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। শুল্ক কমাতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ২৫টি বোয়িং কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। একই কৌশল অবলম্বন করছে ইন্দোনেশিয়া, জাপানসহ অন্য দেশগুলোও।

সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যেসব বাণিজ্যচুক্তি করছে, সেগুলোর অংশ হিসেবে বোয়িং ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন বিমান সরবরাহের কার্যাদেশ পাচ্ছে। এ ধরনের বিক্রি বোয়িংয়ের জন্য ইতিবাচক হতে পারে, কেননা কম্পানিটি কয়েক বছর ধরে নানা সংকটে আছে।

বিপুল অর্ডার : এ বছরের এখনো পর্যন্ত হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশের ২৫টি ছাড়াও শুল্ক কমাতে ইন্দোনেশিয়া ৫০টি বোয়িং কিনবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। জাপান বাণিজ্যচুক্তির অংশ হিসেবে ১০০টি বিমান ক্রয়ের অর্ডার করেছে এবং কম্বোডিয়াও শুল্ক কমানোর স্বার্থে ২০টি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স কেনার ব্যাপারে রাজি হয়েছে। গত মে মাসে কাতার এয়ারওয়েজ বোয়িংয়ের ১৬০টি বিমান কেনার কার্যাদেশ দেয়। আরো ৬০টি কেনার কথা রয়েছে। ভিয়েতনাম ২০২৩ সালে ৫০টি বোয়িং বিমান ক্রয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল, এ বছর আট বিলিয়ন ডলারে সেই চুক্তি চূড়ান্ত করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া গত মার্চ মাসে ৪০টি বিমান ক্রয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে, আরো ১০টি কেনার কথা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজ ২৮টি জেড বিমানের অর্ডার করেছে। মালয়শিয়া ও সৌদি আরব ৩০টি করে বিমানের অর্ডার করেছে।

বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা : বিপুল অর্ডারের কারণে বোয়িং তার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। গত এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠানটি ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান সরবরাহ করেছে ৩৮টি, ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সরবরাহ করেছে সাতটি এবং ৭৭৭ এক্স সরবরাহ করেছে তিনটি। অর্থাৎ গত এপ্রিলে মোট ৪৮টি বিমান সরবরাহ করেছে। ২০২৫ সালের পুরো বছরে কম্পানিটি মোট ৫৭০টি বিমান সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী ২০২৬ সালে এই সক্ষমতা বাড়িয়ে বাণিজ্যিক বিমান উৎপাদন ৭০০ করতে চায়।

বিমান বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব কার্যাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে খুব একটা চাপ দিতে হয়নি। এয়ারলাইনসগুলো বিমান কেনার মতো সিদ্ধান্ত সাধারণত মাসের পর মাস, এমনকি বছরের বেশি সময় ধরে নিয়ে থাকে। এ ছাড়া বিশ্বে বড় যাত্রীবাহী বিমান সরবরাহ করে কেবল দুটি কম্পানি—বোয়িং ও ফ্রান্সের এয়ারবাস।

বোয়িং দুর্ঘটনা : বোয়িংয়ের বিমান বেশ কয়েকবার মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এসব ঘটনায় কয়েক শ মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। সর্বশেষ ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় রাজ্য গুজরাটের আহমেদাবাদের সরদার প্যাটেল বল্লভভাই বিমানবন্দর থেকে ২৪২ আরোহীকে নিয়ে উড্ডয়নের পরপরই বোয়িংয়ের বিমান বিধ্বস্ত হয়। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু দুর্ঘটনার ফলে বোয়িংয়ের চাহিদা কমে যায় এবং কম্পানিটি বড় লোকসানে পড়ে।

লালসবুজ২৪.কম
ইমেইল: info@lalsobuj24.com