বৃষ্টির দিনে মন খারাপ, যে কারণে এমন হয়

বৃষ্টি মানেই স্নিগ্ধতা, শান্তি তবে সেটা সবার জন্য নয়। অনেকে বৃষ্টির দিনগুলোতে মন খারাপ, ক্লান্তি কিংবা বিষণ্নতায় ভোগেন। আপনি যদি এই তালিকায় থাকেন, তাহলে জেনে রাখুন, আপনি একা নন। ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেঘলা আকাশ বা রোদহীন আবহাওয়ায় অনেকেই হতাশার লক্ষণ বেশি অনুভব করেন। একে বলা হয় ‘রেইনি ডে ব্লু’।
তবে তার মানে এই না যে বৃষ্টির জন্য ডিপ্রেশন হয়। তবে এটা ঠিক যে, বৃষ্টি অনেক সময় আমাদের মানসিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং বিষণ্নতা বা ‘সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডার’ বাড়াতে পারে। কেন বৃষ্টি মন খারাপ করে দেয়: মনোবিদরা এ বিয়ে বেশকিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো:
১. সিজনাল ডিপ্রেশন:
সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডার এক ধরনের মানসিক অবস্থা। যেখানে বছর বিশেষ সময়ে প্রায়ই শীতকালে বা মেঘলা দিনগুলোতে ব্যক্তির মানসিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে।
২. সূর্যালোকের অভাব:
সূর্যালোক কমে গেলে শরীরের সেরোটোনিন হরমোন কমে যায়, যা আমাদের মেজাজ ভালো রাখে। পাশাপাশি মেলাটোনিন উৎপাদনেও ব্যাঘাত ঘটে, যা ঘুমের রুটিন নষ্ট করে দিতে পারে।
৩. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত উদ্বেগ:
বন্যা, খরা বা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের মতো আবহাওয়াজনিত সমস্যা অনেকের মনে আতঙ্ক তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেড়েছে, সেখানে হতাশার হারও বেশি।
৪. ঘরবন্দি হওয়া ও একঘেয়েমি:
বৃষ্টি অনেক সময় বাইরের আনন্দদায়ক কাজগুলোতে বাধা দেয়। এতে মন খারাপ ও অলসতা তৈরি হয়।
যেভাবে কাটিয়ে উঠবেন বৃষ্টির দিনে মন খারাপ:
লাইট থেরাপি ব্যবহার:
সিজনাল ডিপ্রেশনে লাইট থেরাপি বেশ কার্যকর। প্রতিদিন সকালবেলা ব্রাইট লাইট এক্সপোজার সেরোটোনিন বাড়াতে সাহায্য করে।
ইনডোর এক্সারসাইজ: বৃষ্টির দিনে ব্যায়াম এড়িয়ে না গিয়ে ঘরেই নাচ, ইউটিউব ফিটনেস ভিডিও বা ঘরের কাজের মাধ্যমে শরীর সচল রাখুন।
পর্যাপ্ত ঘুম: নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস বজায় রাখুন। ঘুম কম হলেও বা বেশি হলেও মুড খারাপ হতে পারে।
বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ: বৃষ্টির দিনে ঘরে বসে একা হয়ে না থেকে ভিডিও কল, গেম নাইট বা বই পড়ার ছোট আড্ডা আয়োজন করুন। মানুষ সামাজিকভাবে বেড়ে উঠে সে কারণে যোগাযোগ মন ভালো রাখতে সহায়ক।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ কখন নেবেন: কিছু লক্ষণ দেখা দিলে এখন মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করাই ভালো এমন বলছেন বিশেষজ্ঞরা। লক্ষণগুলো হলো:
১. দৈনন্দিন কাজ করতে অনীহা
২. ক্লান্তি বা শক্তির ঘাটতি
৩. আত্মহত্যার চিন্তা
বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে বিষণ্নতায় ভোগেন, তাহলে পেশাদার সহায়তা নেয়া জরুরি। এমন থেরাপিস্ট খুঁজুন, যিনি আবহাওয়া-জনিত বিষণ্নতা সম্পর্কে জানেন।
বৃষ্টি যেমন প্রকৃতির স্বাভাবিক রূপ, তেমনি বৃষ্টির প্রভাবে মনের ওঠানামাও স্বাভাবিক। তবে মন খারাপ থাকলেই হাল ছেড়ে দেবেন না। আলো, ঘুম, ব্যায়াম আর প্রিয় মানুষের সাহচর্য এই চারটিই হতে পারে আপনার ‘রেইনি ডে ব্লু’স’-এর সবচেয়ে বড় ওষুধ।