কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ ঘাঁটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

লালসবুজ ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ০৪:১০ পিএম

মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি ‘আল উদেইদ’। এই ঘাঁটিতেই ইরান তাদের সর্বশেষ হামলা চালিয়েছে। এটি কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু। গতকাল সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহৎ সামরিক আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি, যা কাতারে অবস্থিত।

এই ঘাঁটিই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির কেন্দ্র এবং ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের আঞ্চলিক সদর দপ্তর হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ঘাঁটিটিতে বর্তমানে প্রায় ১০হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছেন।
আল উদেইদ ঘাঁটি অত্যন্ত সুরক্ষিত। এখানে রয়েছে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর আফগানিস্তানে তালেবান ও আল-কায়েদার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই ঘাঁটি ব্যবহার শুরু করে। এর দুই বছর পর, এটি পুরো অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান অভিযানের মূল কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।

এই ঘাঁটি থেকেই ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মিশন সমন্বয় করা হয়েছে। এ ছাড়াও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) লক্ষ্য করে চালানো বিমান হামলাও এখান থেকে পরিচালিত হয়েছে।

ঘাঁটিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ধরনের সামরিক বিমান— উন্নত যুদ্ধবিমান, দীর্ঘপাল্লার বোমারু বিমান, ড্রোন, পরিবহন বিমান এবং আকাশে জ্বালানি সরবরাহকারী ট্যাংকার বিমান।

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময়, হাজার হাজার আফগান ও মার্কিন নাগরিককে সরিয়ে নেওয়ার প্রধান কেন্দ্র ছিল এই ঘাঁটি। এখান থেকেই মার্কিন বিমানবাহিনী বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়।

এ ছাড়াও ঘাঁটির কোম্বাইন্ড এয়ার অপারেশন্স সেন্টার (সিএওসি) যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমা শক্তি প্রদর্শনের প্রধান কেন্দ্র, যা উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা থেকে শুরু করে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ২১টি দেশের উপর নজর রাখে ও অপারেশন চালায়।

কাতার ১৯৯৬ সালে এই ঘাঁটির নির্মাণ কাজ শেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রকে আকৃষ্ট করতে চেয়েছিল যেন মার্কিন সেনাবাহিনী এখানে অবস্থান নেয়।

এরপর থেকেই দেশটি ধাপে ধাপে এই ঘাঁটিতে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এ ঘাঁটি কাতারের নিজস্ব সেনাবাহিনী এবং ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্স-এর ব্যবহারের জন্যও উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাতারের কৌশলগত সম্পর্ক দৃঢ় করার অংশ।

আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের ফলে এই ঘাঁটিতে এখন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড ছাড়াও বিশেষ বাহিনীর নেতৃত্বাধীন অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ইউনিট কাজ করে। দীর্ঘ সময় ধরে এই ঘাঁটির অবস্থান গোপন রাখা হলেও, ২০১৩ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হ্যাগেল ঘাঁটির অবস্থান প্রকাশ্যে আনেন।

গত মাসেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলোর চার দিনের সফরের অংশ হিসেবে আল উদেইদ ঘাঁটি পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাতারের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় এবং তার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ইরাক সফরের গল্প তুলে ধরেন, র‍্যালির মতো পরিবেশে সেনাদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেন।

বর্তমানে ইরানি হামলার পর ঘাঁটির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে ঘাঁটির উচ্চ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও কৌশলগত গুরুত্বের কারণে এটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী উপাদান হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে।