মধ্যরাত থেকে ৫৮ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

লালসবুজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩৬ পিএম

মধ্যরাত থেকে ৫৮ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। ছবি: সংগৃহীত

প্রতি বছরের মতো এবারও বঙ্গোপসাগরে শুরু হচ্ছে সাময়িক মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা। সরকার সম্প্রতি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নতুনভাবে নির্ধারণ করেছে—প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। চলতি বছর তা কার্যকর হচ্ছে ১৪ এপ্রিল দিবাগত রাত থেকে।

মূলত গ্রীষ্মকালীন এই সময়টাই সামুদ্রিক মাছের, বিশেষ করে ইলিশের প্রজননকাল। এ সময়ে মাছগুলো উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় ডিম ছাড়ে। এই সময় মাছ ধরা চালু থাকলে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন ব্যাহত হয়, যার প্রভাব পড়ে সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদনে। ২০১৫ সাল থেকে এ বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপটে সরকার প্রতিবছর গ্রীষ্মে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে।

পটুয়াখালীর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, “এই সময়টি মাছের ডিম ছাড়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদে প্রজনন নিশ্চিত করতে নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত জরুরি।”

তবে জেলেদের দিক থেকে উঠে আসছে ভিন্ন চিত্র। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার এক জেলে বলেন, “নিষেধাজ্ঞা মানেই কাজ বন্ধ। সরকার চাল দেওয়ার কথা বললেও অনেক সময় তা ঠিকমতো পাই না।”

স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, খাদ্য সহায়তা বিতরণে অনিয়ম, দেরি ও স্বজনপ্রীতি রয়েছে। প্রকৃত জেলেরা বাদ পড়ে যান, আর সুবিধা পান প্রভাবশালীরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাছের টেকসই উৎপাদনের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এর বাস্তবায়নে জেলেদের সহায়তার দিকটি আরও কার্যকরভাবে দেখতে হবে। সাগর যেমন বিশ্রাম পাচ্ছে, তেমনি উপকূলীয় মানুষের মনেও প্রশান্তি ফেরাতে হবে।

বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারতও একই সময়ের মধ্যে—১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন—তাদের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে পুরো বঙ্গোপসাগরের একটি বড় অংশ এই সময়টায় কার্যত মাছ ধরার বাইরে থাকবে, যা ভবিষ্যতের জন্য সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় জানা গেছে, প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ রাখলে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ২০–২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে, যা দেশের মৎস্য খাতের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি দিক।